সাদিক হাসান শুভ।। বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কীভাবে বিদ্যমান গণ্ডির বাইরে এসে উন্নতি করতে পারে তা নিয়ে আমার কিছু ভাবনা।
১। স্বায়ত্ত্বশাসন ভোগ করতে হলে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি দরকার তা হলো নিজেদের উপার্জন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্ত্বশাসিত কিন্তু নিজেদের উপার্জন না থাকার কারণে একজন পিওন নিয়োগ দিতে গেলেও তাকিয়ে থাকতে হয় সরকারের দিকে। সরকারের অনুমোদন না পেলে ঐ পিওনের কাজ অসমাপ্ত থেকে যায়। সরকার বা অন্যকোন প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দ না পেলে গবেষণার কাজও হয় না। এসকল সমস্যা সমাধানের উপায় হলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব উপার্জন। এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব উপার্জন কোথা থেকে আসবে? শিক্ষার্থীদের বেতন বা ভর্তির চার্জ থেকে? অবশ্যই না। কারণ বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসকল শিক্ষার্থী ভর্তি হয় তাদের বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত বা নিন্মমধ্যবিত্ত পরিবারের মেধাবী সন্তান। তাদের উপর আয়ের বোঝা বাড়ানোতো উচিত হবেই না বরং যা আছে তাও কমানো উচিত। তাহলে আয় হবে কোথা থেকে? উত্তর হলো সেনাবাহিনীকে অনুসরণ করা। সারাদেশে সেনাবাহিনীর বহু প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলো থেকে তারা আয় করছে। এবং সেনাদের উন্নয়নে ব্যয় করছে। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কি এসকল প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা? না, এটা অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ নয় কিন্তু সমৃদ্ধ হতে এ কাজ করতে আপত্তি কোথায়? এগুলো বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞান চর্চাকেই সমৃদ্ধ করবে। উদাহরণ দিচ্ছি। যেমন ধরুন বিশ্ববিদ্যালয়ের যদি একটি ব্যাংক থাকে তাহলে এটি হবে ব্যাংকিং বিভাগের একটি ল্যাবরেটরি। এখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা গবেষণা করবে। এই ব্যাংকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাকরি হবে। যা আয় হবে তা যাবে বিভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে। এতে তো সব দিকেই লাভ। এভাবে সফটওয়ার কোম্পানি থাকবে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধীন, ঔষধ কোম্পানি থাকবে ফার্মেসি বিভাগের অধীন ইত্যাদি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি আয়ের উৎস যেটি চলমান তা হলো প্রাইভেট কোর্স বা সান্ধ্য কোর্স। এটি থাকা উচিত। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এটি শুধু অর্থের যোগানই দেয় না বরং প্রফেসনালদের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করে। এর মাধ্যমে শিক্ষকগণও অনেক কিছু শিখতে পারেন। এটি বন্ধ হলে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দারস্থ হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের খন্ডকালীন হিসেবে নিয়োগ দিবে। ফলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অবহেলিত হবে। মনে রাখা প্রয়োজন যারা প্রাইভেট কোর্সে আসে তারাও এদেশের শিক্ষার্থী। নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ক্ষতি না করে যদি তাদের সুযোগ দেওয়া হয় তাতে আমি দোষের কিছু দেখিনা।
২। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রাষ্টের কাছে গুরুত্ব হারাচ্ছে। এর কারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো না পারছে কার্যকরী কোন গবেষণা করতে না পারছে নিজেদেরকে একটি শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করতে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শক্তিশালী অবস্থানের জন্য প্রয়োজন ঐক্য। ১ নম্বরে যে কথা বললাম এটি করতে হলে এবং রাষ্ট্রে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে হলে নিজেদের ঐক্য বাড়াতে হবে। সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মিলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আদলে একটি ইউনিয়ন গঠন করতে পারে। যেখানে নিজেদের আলাদা বাজেট হবে, সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা হবে। এরকম একটি ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে রাষ্ট্রের কাছে কার্যকরী এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলবে।
৩। শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য জ্ঞান বিনিময়ের কোন বিকল্প নেই। যদি প্রেশনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞ শিক্ষকগণকে পাঠানো যেতো তাহলে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চেহারা বদলে যেতো। তাদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।
৪। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক এবং কর্মকর্তা নিয়োগের পর কোন প্রশিক্ষণ ছাড়াই কাজ শুরু করে। যদি নিয়োগের পর একটি নির্দিষ্ট সময় তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো তাহলে কর্মক্ষেত্রে তারা আরো বেশি ভালো করতো বলে আমার বিশ্বাস।
বিষয়গুলো ভেবে দেখতে পারেন।
লেখকঃ সাদিক হাসান শুভ, শিক্ষক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।